সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বিতর্ক, যুক্তি এবং আবেগ

বিতর্ক, যুক্তি এবং আবেগ
-------------------------------------------------------------
তর্ক করব না; তাই বিতর্ক করব।  তর্ক থেকে বিতর্ক একেবারেই আলাদা ৷ তর্কে যুক্তি থাকে না, বিতর্কে থাকতেই হয় ৷ থাকতে হয় ভাষার চমৎকার ব্যবহার ও যথার্থ আবেগও ৷ মানুষ হিসেবে আমাদের সবার মধ্যেই আবেগ থাকে ৷ দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, সাফল্য, ব্যর্থতা সবই থাকে ৷ আর এমনটাই স্বাভাবিক ৷ তবে বিতর্ক যেহেতু বিশেষভাবে তর্ক, তাই এতে যুক্তির প্রাধান্যই বেশি ৷ বিতার্কিকের একটি যুক্তিনির্ভর মন থাকতে হবে ৷ যুক্তির চর্চা করতে হবে ৷ তার জন্যে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে ৷ কারণ যদি বিষয়গুলো পরিষ্কার জানা না থাকে, তাহলে যুক্তির বিনির্মাণ করা যায় না ৷ ফলে যে কোনো বিষয়েই বিস্তারিত পড়াশোনা খুবই জরুরি। তবে কেবল পড়লেই চলবে না, মনের ভেতরে সেগুলোকে জায়গাও করে দিতে হবে I দরকারের সময় ঠিক বক্তব্য ঠিক জায়গায় উপস্থাপনের পারদর্শিতা অর্জন করতে হবে।  যুক্তির মধ্যে বুদ্ধি ও জ্ঞানের ছাপ থাকতে হবে।  বিতর্ক আমাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে, কৌতূহলী করে।  আর এ কারণেও বিতর্ক করব ৷
আগেই বলেছি বিতর্কে যুক্তিই সব নয়।  বিতর্কে আবেগ থাকে, থাকতে হয়।  থাকতে হয় ভালো চিন্তার একটি মন ৷ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রমাণই সব; এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই।  তার প্রমাণ করতে গিয়ে ভাষার ব্যবহারে যদি যথার্থ আবেগ আনা যায় তবে সেই বক্তব্য হবে হৃদয়গ্রাহী ৷
প্রখ্যাত বিতার্কিক বিরূপাক্ষ পাল তাঁর ‘বিতর্কে আবেগ: হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘বিতর্ক যদি একটি শিল্প হয় কি'ৎবা শৈলী হয়, তাহলে এ কথাও মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোনো শিল্প বা শৈলীই আবেগবর্জিত নয়।  পৃথিবীর এমন কোনো বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি যা আবেগবর্জিত, এমন কোনো বিখ্যাত ভাষণ সৃষ্টি হয়নি যার সাথে আবেগের সার্থক মিথক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এমন কোনো উদ্বুদ্ধকরণ ঘটেনি যার গভীরতম আসনে আবেগ উদ্দীপকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত ছিল না।
সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই আবেগ মানুষের চিরবন্ধু, চিরনির্ভর। ফলে বোঝাই যাচ্ছে বিতর্কে আবেগের জায়গা ভালোভাবেই আছে ৷ তবে তা কোনো অবস্থাতেই যুক্তিকে বাদ দিয়ে নয় ৷ যুক্তি বিতর্কের প্রাণ ৷ আর আবেগ হচ্ছে বিতর্কের অলংকার, যার সার্থক ব্যবহার বিতর্কের সৌন্দর্য বাড়ার ৷ এর সাথে থাকতে হয় ভাষার যথার্থ ব্যবহার ৷ বিতার্কিকের ব্যক্তিত্বের ওপর নির্ভর করে তার বক্তব্য মানুষ কতটা বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ৷ বিতর্কে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনও বড় বিষয় ৷
বিরূপাক্ষ পালের লেখা থেকেই বিতর্কে আবেগ যুক্ত করার একটি উদাহরণ তুলে ধরছি। ' এই মুহূর্তে বিদেশী সাহায্য বন্ধ করে দেয়া উচিত' বিষয়ের বিপক্ষের বক্তাও দক্ষতার সাথে আবেগের ব্যবহার করতে পারেন নিম্নোক্ত ধরনের ভাষণেঃ
'সম্মানিত সভাপতি, প্ৰতিপক্ষের বক্তা বিদেশী সাহায্য এই মুহূর্তে বন্ধ করে দিয়ে তার গভীর দেশগ্রেমের পরিচয় দিতে চাইলেন।  কিন্তু তা গভীর দেশপ্রেম নয়; এটা অন্ধ দেশপ্রেম ৷ ' এটা আত্মঘাতী দেশপ্রেম ৷ তিনি কাব্যিক আবেগের আশ্রয়ে রবীন্দ্রনাথকে টেনে এসেছেন।  
তিনি বলেছেন ‘মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই দীন দুঃখিনী মা যে তোদের তার যে বেশি সাধ্য নাই। ’
কিন্তু যেখানে মোটা কাপড়ই নেই, সেখানে কী মাথায় তুলে নেব? আগে মোটা কাপড় উৎপাদনের ব্যবস্থা তো করতে হবে। তার জা…ন্য আপাতত বিদেশী সাহায্যে কাপড়ের কারখানা গড়ে তুলতে হবে, দেশের মোট বস্তের চাহিদা মেটাবার মতো আত্মশক্তি অর্জন করতে হবে এবং তখন বিদেশী সাহায্য বর্জন করতে হবে।  প্রতিপক্ষ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ পড়েছেন, পড়েননি রবীন্দ্রনাথের আত্মশক্তি কবিতা, যেখানে তিনি বিপদ অতিক্রমের জন্য আগে আত্মশক্তি অর্জনের কথা বলেছেন। ’
উপরের উদাহরণটি থেকে বিতর্কে আবেগের ব্যবহার বোঝা গেল।  কেবল আবেগ নয়, একই উদাহরণে যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষের বক্তব্য খণ্ডনের চেষ্টাও আছে।  ফলে যুক্তি আর আবেগের মিশেলে এগিয়ে যাওয়া বক্তব্যই বিতর্ক। 
তাহলে কেন বিতর্ক করব? এই প্রশ্নের উত্তর আরো নানাভাবেই ভাবা যায় ৷ যেমন জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেছেন, ‘মনে রাখতে হবে একটা চিন্তার বিপরীতে অন্য চিন্তা থাকতে পারে।  একটা দৃশ্যের পেছনে আরেকটা দৃশ্য থাকতে পারে।  এই বিষয়গুলো ‘বিতর্ক’ আমাদের শেখায় ৷’

চমৎকার উপস্থাপনা, বাচনভঙ্গি ও শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতে পারার যোগ্যতা বিতার্কিকের থাকতেই হয়।  তবে এগুলেড়া কারো থাকে কম, কারো বেশি ৷ চেষ্টা আর চর্চা অব্যাহত রাখলে এসবের অনেক কিছুই অর্জিত হতে পারে। 

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

বারোয়ারী বিতর্ক
---------------------------------------------->>>>>
বিতর্কের সবচেয়ে শিল্পিত ধারার নাম বারোয়ারী বিতর্ক। এ বিতর্কে পক্ষ-বিপক্ষ থাকে না। প্রত্যেকে স্বাধীনভাবে নিজের মনের জানালা খুলে ভাবতে পারে। ভাবনার অভিনবত্ব ও সৃষ্টিশীলতা এ বিতর্কের প্রাণ। এ ধারার বিতর্কের বিষয়গুলোও হয় একটু ভিন্ন ধরণের-যেমন-‘এসো নতুন সূর্য রচনা করি’-এক্ষেত্রে বিতার্কিক তার ইচ্ছে মত সূর্য বিশ্লেষণ করতে পারে স্বপ্ন দেখতে পারে/স্বপ্নে আসে শুধু ইত্যাদি।
প্রথমেই সভাপতিকে ধন্যবাদ দিয়ে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সুন্দর ও সৃজনশীল একটি স্ট্যান্ড পয়েন্ট দাঁড় করাতে হবে।
স্ট্যান্ড পয়েন্টটি দাঁড় করানোর পর বিষয়ের সাথে তার একটি সুন্দর সম্পর্ক দাঁড় করাতে হবে।
এরপর বিভিন্ন যুক্তি ও কৌশল অবলম্বন করে বিষয়টিকে প্রদত্ত স্ট্যান্ড পয়েন্টের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
কোন অবস্থাতেই একাধিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট নেয়া যাবে না এবং প্রদত্ত স্ট্যান্ড পয়েন্টের বাইরেও যাওয়া যাবে না। বিভিন্ন উদাহরণ আসলেও তা স্ট্যান্ড পয়েন্টের সাথে সম্পর্কিত করতে হবে।
এ বিতর্কে বিষয়, আবেগ ও শব্দচয়নের মধ্যে একটি সুন্দর সামঞ্জস্য তৈরী করতে হবে। শব্দ চয়ন হতে হবে চমৎকার বিষয় ও স্ট্যান্ড পয়েন্ট যেভাবে দাবী করে সেভাবে আবেগ দিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে।

বিখ্যাত কবিতা, গান বা অন্য ক‌োনো উৎস থেকে সুপরিচিত পংক্তি নিয়ে অনেক সময় বারোয়ারি বিতর্কের বিষয় নির্বাচন করা হয় । আবার নিরেট গদ্যও বারোয়ারি বিতর্কের বিষয় হতে পারে ।
১. দহিল হৃদয়মন সেই ক্ষোভানলে ।
২. সবক’টা জানালা খুলে দাও না ।
৩. মাথার ভেতরে এক বোধ কাজ করে ৷
8. হ্যাঁ তবুও এ পৃথিবী ।
৫. দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ।
৬. আমার যেটুকু সাধ্য...
৭. যদি আরেকটু সময় পেতাম ।
৮. যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মহুরে।
৯. ওমা অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে কী দেখেছি...
১০. স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ম্ভীতে বাংলাদেশ।
১১. আমরা যদি না জাগি মা...
১২. চোখের তারায় স্বপ্ন ভাসে...

শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

বিতর্ক প্রতিযোগ‌িতার প্রয়োজনীয়তা কেন?

সাবলিল এবং স্বচ্ছ বক্তৃতামালা বা বিতর্ক মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে ।অতীতে যারা বিভিন্ন অান্দোলন‌ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বক্তৃতা শুনেই মানুষ উজ্জীবিত হয়ে‌ছ‌ে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মন-মননে সাড়া দিয়ে তাদের জাগিয়ে তুলতে হয়। আর সাধারণ মানুষ প্রচারকদের কথা শুন‌েই আবেগতাড়িত হয়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় ৷ ব্যক্তিত্বের বিকাশ, নিজের চিন্তাধারা সম্প্রসারণ, স্বীয় আদর্শ, চেতনা ও আবেগ সাথে অনেককে সম্পৃক্ত করে এক অর্থবহ সার্থক-সফল জীবন গড়তে বক্তৃতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।দেশ জাতি ও মানবতার বৃহৎ কল্যাণ আত্মনিয়োগ সুন্দর এক কাঙ্খিত স্বপ্নময় সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্য‌ে নিজেকে সুবক্তা হিসেবে সুপ্ৰতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন। আর এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্য‌োগ নেবার বর্তমানই সর্বোত্তম সময়। বিতর্ক মানেই বাচনিক লড়াই। নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য বিবাদ, বিতর্ক, আলোচনা ৷ শিক্ষামূলক এবং বিনোদনের স্বাদ মেটাতে ও বিতর্ক আয়োজিত হয়। যদিও শিক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ই বেশি পরিমাণে থাকে ।এটাই এমন এক জায়গা যেখানে কথোপকখন এবং নিজস্ব যুক্তি মেলে ধরা উভয়ই সম্ভব ৷ আলোচনায় নিজের জায়গা ধরে রাখতে হলে যুক্তিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন, যা তথ্য দেয়া হবে তা সঠিক রাখতে হবে ।এসব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাথায় রাখলে তবেই বিতর্কের সফলতার দিকে এগােনাে যায় ৷ যুক্তিতর্ক‌ের নির্যাস নির্ভর করে অংশগ্রহণকারীদের একমত হওয়ার ওপর বা কিছু প্রথাগত উপায়ে সমাধানের যাওয়ার পথে।নিয়মমাফিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রতিয়োগীদের জন্য নিয়ম-কানুন থাকে। যুক্তিতর্ক‌ের গুণাগুণ এবং গভীরতা উন্নত ও সহায়ক হয় অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞান এবং দক্ষতার ওপর।প্রতিযোগিতার ফলাফল ঠিক হতে পারে দর্শকদের ভোটের দ্বারা, বিচারকদের দ্বারা বা উভয়ের সমস্বয়ের দ্বারা। টেলিভিশনের পর্দায় এরকম যুক্তিতর্কের অনুষ্ঠান এখন রীতিমতো জনপ্রিয়। অনুষ্ঠানে একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়।

শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

স্কুলে বিতর্ক শিক্ষা এবং প্রতিযোগ‌িতা জরুরি কেনো? 
একজন ভালো তার্কিক সৃষ্টিতে শিক্ষকের ভূমিকা কি? 

শ‌িক্ষার্থীদ‌ের ব‌িতর্ক শ‌েখার জন্য স্কুল পর্যায় হচ্ছ‌ে মোক্ষম সময়।ক‌েননা এ সময় শ‌িক্ষার্থীরা চ‌িন্তা করত‌ে শেখ‌ে,জ্ঞান অাহর‌ণ  করত‌ে শেখ‌ে।ফল‌ে তারা সহজ‌ে বিষয়ট‌ি নিয়‌ে ভাবত‌ে পার‌ে।অার এ ক্ষ‌েত্র‌ে শিক্ষকদ‌ের রয়‌েছে গুরত্বপূর্ণ  ভূম‌িকা।
কথায় আছে, যেনো মুলেটো বাড়বে তা পত্তনেই বোঝা যায়। সুতরাং স্কুলের শিক্ষকরাই সর্বপ্রথম বুঝতে পারেন তাদের শিক্ষার্থীরা কে কমন হবে। কার কেমন অভ্যাস, ধ্যান-ধারণা, সঙ্গতি-অসঙ্গতি এবং কার কতটা দেশপ্র‌েম।ক্লাস ট‌িচারেই বুঝেন তিনি কার ওপর ক্লাসের ভার দিলে সে ক্লাস ঠিকমতো পরিচালনা করতে পারবে ৷ কার আছে বক্তব্য দেয়ার ক্ষমতা, আছে গল্প বলার চাতুর্যতা ৷ সুতরাং স্কুল পর্যায়ে যদি এই বিতর্ক নামের বাচিক শিল্পের প্রসার ঘটানো যায় তবে অজস্র মেধাবী শিশু বেড়‌িয়‌ে আসবে ৷ কেনো না একটি শিশুর সব প্রকার বহিঃজগতের ক্রিয়া কলাপ শুরু হয় তার বিদ্যালয় থেকে। এই শিশুরা শুধু পরীক্ষাতেই ভালো করবে না তারা জাতি গঠনেও বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করবে ৷ তাই ছোটবেলা থেকেই স্কুলপর্যায়ে যেসব বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে শিশুদের উৎসাহিত করা উচিত ৷ বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য অনেক বিষয় সম্পর্কে প্রচুর পড়ালেখা করতে হয় সিনিয়রদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়। এতে অনেক জ্ঞান বাড়ে। আর যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হবে, তা সম্পর্কে ভালোভাবে না জানলে প্ৰতিপক্ষের সাথে সমান তালে তর্ক করা যাবে না। তাই ওই নির্দ‌িষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি আরও ব্যাপক হতে হয়। এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের শ‌িক্ষকরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন ৷ তারাই তাদের ছাত্রদের শেখাতে পারেন বিতর্ক‌েরে এ টু জ‌েড ৷
-সংকল‌িত ও সম্পাদ‌িত

শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বিতর্কের জনপ্রিয় কিছু ফরম‌েট

বিতর্কের জনপ্রিয় কিছু  ফরম‌েট
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
১।সনাতনী বিতর্কঃ
সনাতনী বিতর্কে দুটি দল থাকে।একটিকে বলা হয় পক্ষ দল এবং অপরটিকে বলা হয় বিপক্ষ দল
যিনি বিতর্ক পরিচালনা করেন তাকে বলা হয় সভাপতি।একটি বিষয় থাকে যেটির পক্ষে পক্ষ দল কথা বলে অপর দিকে বিপক্ষ দল সেটির বিরোধীতা করে ।
সনাতনী বিতর্কে দুটি পর্ব থাকে
গঠনমূলক পর্ব  
যুক্তিখন্ডন পর্ব
গঠন মূলক পর্বঃ  এই পর্বে প্রত্যেক বক্তা ৫ মিনিট করে সময় পায় নিজের বক্তব্য প্রদানের জন্য।  নিম্নের পর্যায়ক্রমে বিতর্ক এগিয়ে যায়ঃ
                   
পক্ষ দল                            বিপক্ষ দল
প্রথম বক্তা                       প্রথম বক্তা
দ্বিতীয় বক্তা                     দ্বিতীয় বক্তা
 দলনেতা                          দলনেতা
যুক্তি খন্ডন পর্বঃ  এই পর্বে উভয় দলের দলনেতা ৩ মিনিট করে সময় পান বিপরীত দলের যুক্তি খণ্ডন করার।
দায়িত্বঃ
উভয়দলের প্রথম বক্তার কাজ হচ্ছে বিষয় এবং দলের অবস্থান পরিস্কার করা ।পুরো বিতর্কটি কেমন হবে সেটা মডেল প্রদান করা ।তবে বিপক্ষ দলের প্রথম বক্তার আরেকটি কাজ হচ্ছে তার আগে বক্তব্য দেওয়া পক্ষ দলের অবস্থানের সীমাবদ্ধতা অলোচনা করে যাওয়া।

দুই দ্বিতীয় বক্তার কাজ হচ্ছে নিজেদের অবস্থান শক্ত করে যাওয়া । তথ্য ও যুক্তি প্রদান করা এবং প্রতিপক্ষ দলের অবস্থানের অসারতা প্রমান করা ।

দুই দলনেতার নিজেদের দলীয় অবস্থান নিয়ে কথা বলবে তবে তাদের থেকে একটি সারমর্ম আশা করা হয় যা মূলত তাদের প্রধান কাজ ।তারা সারমর্ম প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করবে ।

২। বারোয়ারী বিতর্কঃ
বারোয়ারী বিতর্ক বিতর্ক ফরম্যাট গুলোর মধ্যে অন্য রকম একটি ফরম্যাট ।
আমরা মুলত দেখতে পাই যে বিতর্ক গুলো দলগত  হয় এবং দলগত ভাবেই ফলাফল প্রকাশ করা হয় । এখানে ব্যক্তি বিতার্কিকের থেকে দলের বিতার্কিক ব্যাপারটি মুলত আলোচনায় আসে। বারোয়ারী বিতর্ক এর থেকে বাইরে চলে আসে । যেখানে একটি বিষয়ের উপর বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতবাদের কথা বলে। এই বিতর্কে আমরা public speaking কিনবা উপস্থিত বক্তৃতার সাথে তুলনা করতে পারি। এই বিতর্কের বিষয় হয় অনেকটা মুক্ত ধরনের । যেমন হতে পারে " আজ হতে শত বছর পর..." এখানে বিতার্কিকরা বিভিন্ন দিক থেকে বক্তিতা নিয়ে আসবে, এই বিতর্কে শিল্পের প্রয়োগ দেখা যায় । তার কারন এই বিতর্ক মুক্ত ভাবে চিন্তা করার ও তা বলার নিশ্চয়তা দেই । একটি বিষয়ের উপর ১০ জন কিনবা ১৪ জন নিজেদের মতামত নিয়ে আসছে তাও ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে ...।এখানেই বারোয়ারী বিতর্কের  প্রার্থক্য । এই বিতর্কে আবেগের ব্যবহার করাটাও লক্ষ করা যায় । আসে হাসি , উৎসবের গল্প । আত্ম সমালেচনা করাও যায় এখানে । মোট কথা বারোয়ারী বিতর্ক কোন বিতার্কিকের মন খুলে ভাবার জায়গা এবং সেটিকে যুক্তি ও শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করার সুযোগ।
নিম্নে কিছু বারোয়ারী বিতর্কের বিষয় দেওয়া হল

তোরা যে যা বলিস ভাই ...
মুক্তির পথে...
আমরা করব  জয়...
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ...
আমারও ইচ্ছা করে ...

‌  ৩।প্লানচ্যাট বিতর্কঃ
বিতর্কের এই রূপটি প্রতিযোগিতার জন্য নহে। সাধারণত Show Debate হিসেবে এই বিতর্ক করা হয়। খুবই রোমাঞ্চকর এই বিতর্ক। এই বিতর্ক করতে পরিবেশটি লাগে আলো-আঁধারের মত। সচরাচর মোম জ্বালিয়ে কিংবা মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে বিতর্ক মঞ্চটি সাজানো হয়। আলো-আঁধারের মধ্যে বিতার্কিকরা বসে থাকেন। অথবা মঞ্চের পেছনেও থাকতে পারেন। এই বিতর্কটি অতীত ও বর্তমানের আলোচিত কিছু চরিত্র (ইতিবাচক-নেতিবাচক) নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। একে একে বিভিন্ন চরিত্র এসে তাদের কৃতকর্মের বর্ণনা দেন এবং শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়ার চেষ্টা করেন। একজনের বিতর্ক শেষে উপস্থিত দর্শকসারি থেকে উক্ত তার্কিককে প্রশ্ন করা যাবে-তার চরিত্র বা কৃতকর্ম সংশ্লিষ্ট। মৃত বা জীবিত দু’ধরণের চরিত্রই প্লানচ্যাট বিতর্কে উপস্থিত হয়। এই বিতর্কে সবচেয়ে মজার কাজটি করে থাকেন বিতর্ক মডারেটর। যিনি পর্দার আড়াল থেকে পুরো বিতর্কটি পরিচালনা করে উপভোগ্য করে তোলেন। এই বিতর্কে যিনি মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন তাকে ‘ওঁঝা’ বলা হয়।

৪। রম্য বিতর্কঃ
সাধারণতঃ বিতর্ক অনুষ্ঠানে দর্শক-শ্রোতা মনোরঞ্জনের জন্য প্রীতি বিতর্ক হিসেবে রম্য বিতর্কের আয়োজন করা হয়। একটু চটুল বিষয় নির্ধারণ করা হয় এ ধরণের বিতর্কে। যেমন- “মন নয় চাই মোটা মানিব্যাগ, সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের ত্যাগ বেশী।” এবং বিতার্কিকরাও এই বিতর্কে হাস্যরসাত্মক ভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
সনাতনী ও সংসদীয় উভয় ফরমেটে রম্য বিতর্ক করা হয়।

৫। আঞ্চলিক বিতর্কঃ
আঞ্চলিক বিতর্ক রম্য বিতর্কেরই একটি ধারা। বারোয়ারী ফরমেটে এ বিতর্কে প্রত্যেক বিতার্কিক নির্দিষ্ট অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষায় বিতর্ক করে থাকে। যেমন, একটি বিতর্কে ৬ জন বিতার্কিক যথাক্রমে বরিশাল, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা (অবশ্যই পুরান ঢাকাইয়্যা) ও রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বিতর্ক করতে পারে। এ বিতর্কে বিতার্কিক সংখ্যা যে কোন সংখ্যার হতে পারে।

৬। জুটি বিতর্কঃ
এই বিতর্কটিও ‘শো-ডিবেট’ হিসেবে জনপ্রিয়। জীবিত অথবা মৃত বাস্তব জুটি, অথবা সিনেমা, নাটক, কিংবা উপন্যাসে জনপ্রিয় কোন জুটির ভূমিকায় ২ জন করে এ বিতর্কে অংশ গ্রহণ করে। জুটি সংখ্যা যে কোন মাত্রার হতে পারে, যেমনঃ দেবদাস-পার্বতী, অমিত-লাবণ্য, ডি ক্যাপ্রিয়-উইন্সলেট, বাকেরভাই-মুনা ইত্যাদি চরিত্রে বিতর্ক হয়। তারা প্রত্যেকে নিজেদের ত্যাগকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করে।

শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ব‌িতর্ক প্রত‌িযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার শর্ত
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

ক‌েউ  অপরাজ‌েয় নয়। সব প্রত‌িয‌োগিতাত‌েই জয়-পরাজয় রয়‌‌েছে। ব‌িতর্কও এর ব্যত‌িক্রম নয়।একজন উঁচু মানের ব‌িতার্ক‌িকও পরাজয়‌ের সম্মুখীন হত‌ে পার‌েন। সেটিকে স্বাভাবিক বল‌েই মেনে নিতে হবে।ন‌িরঙ্কুশ
জয়‌ের ন‌িশ্চয়তা ক‌োনো প্রত‌িযোগিতাত‌েই ন‌েই। বিতার্কিকরা যদ‌ি ন‌িচের ব‌িষয়গুল‌োর উপর বিশেষ দৃষ্ট‌ি রাখে তাহল‌ে বিতর্কে জয়লাভ সহজ হব‌ে।
>>ব‌িতর্ক‌ের ক‌ৌশল ন‌ির্ধারণ
>>পূর্ণপ্রস্তুত‌ি
>>অাত্মব‌িশ্বাস
>>প্রত‌িপক্ষক‌ে অবজ্ঞা না করা
>>প্রথম‌ে সহমত,পর‌ে ভিন্নমত
>>দর্শক সমর্থন
>>বাস্তব উদাহরণ
>>দৃশ্যমানতা
>>য‌ৌক্ত‌িকতা
>>শুদ্ধ উচ্চারণ‌
>>সময়‌ের ব্যবহার

AI in Education, AI in Teaching: Revolutionizing Learning

Artificial Intelligence (AI) is changing many fields. Education and teaching are no exceptions. ...